
ভারতে মুসলিমদের মৌলিক অধিকার প্রশ্নের মুখে?
লেখক এবং সম্পাদক Muslim Observer।
ভারতে মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা আবারও প্রশ্নের মুখে পড়েছে । সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে উত্তর প্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিমেরা,যখন ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাসূলুল্লাহ (স) -এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে “আই লাভ মুহাম্মদ” লেখা ব্যানার ও লাইটবোর্ড স্থাপন করে। তখন তাদের পুলিশি অভিযান, মামলা ও গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হতে হয়। শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় প্রকাশকে “উসকানি” হিসেবে চিহ্নিত করে রাষ্ট্রীয় দমননীতির নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
৪ সেপ্টেম্বর কানপুরের রাওয়াতপুরে একটি লাইটবোর্ডে “আই লাভ মুহাম্মদ” লেখা হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ তা কারণ ছাড়াই সরিয়ে নেয়। মুসলমানদের দাবি – এটি কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং বিশ্বনবীর প্রতি ভালোবাসার প্রতীক। কিন্তু প্রশাসনের চোখে এটি ছিল শান্তি ভঙ্গের সম্ভাবনা।
বাংলাদেশে সমকামিতা বৈধ করতে চাই : জুনায়েদ সাকি

এরপর আবার ২৫ সেপ্টেম্বর বারাণসীর মদনপুরায় মুসলিমরা শান্তিপূর্ণভাবে একই স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নামলে পুলিশ সেটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। শিশুদের অংশগ্রহণ থাকা সত্ত্বেও কঠোর অভিযান চালানো হয়। চারজন মুসলিম নেতা – মাওলানা শাহজেব মুহাম্মদী, আওয়েশ রাজা মাদনী, হাজি হারুন এবং হাফিজ আব্দুল কাদির – এর নামে মামলা হয় এবং ৪৫০ জন মুসলিমকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
একই সময়ে ২৪ সেপ্টেম্বর বারাণসীতে হিন্দু নেতৃত্বে “আই লাভ মহাদেব” নামে পাল্টা শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়, যা পূর্ণ অনুমতি ও প্রশাসনিক সহায়তা পায়। যা স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, ভারতে মুসলমানদের অবস্থা কেমন।
সমালোচকদের মতে, মুসলিমদের ঈমানি প্রকাশ যেখানে রাষ্ট্রের চোখে অপরাধ, সেখানে হিন্দুদের প্রকাশ্য সমাবেশ রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় পায় – এটি বর্তমানে ভারতের দ্বিমুখী নীতির স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি শাসিত রাজ্যে মুসলিমদের মৌলিক অধিকার খর্ব করে হিন্দু ভোটব্যাংককে শক্তিশালী করার চেষ্টা চালাচ্ছে মোদি সরকার । সাথে মুসলিম ভোটের ওপর নির্ভরশীল বিরোধী দলগুলোও কার্যত নীরব, যা মুসলিমদের মধ্যে হতাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ।
এই ঘটনার পর, AIMIM প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসী ভারতের সংবিধানের ২৫ ধারা উল্লেখ করে ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবি তুললেও মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয়নি। কারণ তারা হিন্দুদের বিপক্ষে যেতে চাই না। গেলেই তাদের ভোট কমবে।
ভারতের মুসলিমরা নতুন করে সেই পুরোনো বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি প্রকাশকে বারবার দমন করা হয়েছে। ১৯১০ সালের পেশোয়ার দাঙ্গা থেকে গুজরাট ২০০২ পর্যন্ত ইতিহাস সাক্ষী, মুসলমানদের ওপর বৈষম্য ও সহিংসতা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, অবৈধ ঘোষণা দিয়ে মুসলিম সমাবেশ ভেঙে দেওয়া সম্প্রদায়গত উত্তেজনা বাড়িয়ে দেয়, অথচ এসব সমাবেশের অধিকাংশই শান্তিপূর্ণ ছিল। ভারতে হিন্দুদের জন্য সম্পুর্ণ রাস্তা ছেড়ে দেওয়া হয় কিন্তু মুসলিমেরা ৫ মিনিট জুমআর নামাজ পড়লে, পুলিশ নাথি মারে।
“আই লাভ মুহাম্মদ” শোভাযাত্রা নিয়ে পুলিশের কঠোর অবস্থান মুসলিমদের মনে আশঙ্কা জাগিয়েছে, যে ভারতে তাদের বিশ্বাস প্রকাশও আজ অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। মুসলমানদের অভিযোগ – রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের কারণে তাদের ধর্মীয় অধিকার শুধু খর্বই হচ্ছে না, বরং রাজনৈতিকভাবে তাদের কোণঠাসা করার একটি অপকৌশল বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

ভারতের মুসলমানরা আজ এক কঠিন বাস্তবতার মুখে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ স এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের মতো সরল ও ঈমানি অনুভূতিও দমন করা হচ্ছে, মামলা দেওয়া হচ্ছে, এমনকি শিশুদের অংশগ্রহণকেও অজুহাত বানানো হচ্ছে।
সমালোচকদের মতে, এটি শুধু মুসলিমদের মৌলিক অধিকার হরণের উদাহরণ নয়, বরং ভারতের গণতন্ত্র ও সংবিধানের উপরও সরাসরি আঘাত। মুসলিম সম্প্রদায় ন্যায়বিচার ও সমান অধিকারের দাবি জানাচ্ছে, কিন্তু রাষ্ট্রীয় পক্ষপাতদুষ্টতা তাদের সংগ্রামকে আরও কঠিন করে তুলছে।
এখন দেখার বিষয়, ফিলিস্তিনে মুসলমানদের ওপর ইজরায়েলের আগ্রাসনের পর ভারতে মুসলমানদের সাথে যা শুরু হয়েছে, তা কতদুর যায়। নাকি তার আগেই জেনজি – বিপ্লবের মাধ্যমে মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকারের পতন ঘটে।