
ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আজ রোববার সকালে একটি বিতর্কিত বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন যে, তাঁর নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ১.ফোরডো ২.ইসফাহান ৩.এবং নাতানজ – এর উপর ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়েছে।
ট্রাম্পের দাবি, এই আক্রমণে উল্লেখিত স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। এই ঘোষণা বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে, তবে এখনো এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কোনো সরকারি নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি।
ইরানের ফোরডো পারমাণবিক উন্নয়ন কেন্দ্রটি কোম শহরের কাছে একটি পর্বতে গভীরভাবে অবস্থিত, যা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই স্থাপনাটি ২০০৯ সালে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাদের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালের সংযুক্ত ব্যাপক করার পরিকল্পনা (JCPOA) এর আওতায় এর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল।
তবে, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) ২০২৪ সালে জানিয়েছে যে, ইরান সাম্প্রতিক সময়ে ফোরডোতে সেন্ট্রিফিউজ বৃদ্ধি করেছে, যা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।

পরবর্তীতে, ইসরাইলের পক্ষ থেকে ইরানের বিরুদ্ধে প্রাক্কালিক আক্রমণের পরিকল্পনা জানানো হয়েছিল, যা দ্য টাইমস অফ ইসরাইল এর একটি রিপোর্টে (ডিসেম্বর ২০২৪) উল্লেখ করা হয়েছে। এই পটভূমিতে ট্রাম্পের আক্রমণের দাবি বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও জটিল করে তুলেছে। Our Online Store BD MATJAR
ইরানের জাতীয় পারমাণবিক নিরাপত্তা কেন্দ্র জানিয়েছে যে, আক্রমণের পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো বিকিরণ দূষণের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। আইএইএ-এর একটি সামাজিক মাধ্যম পোস্টে জানানো হয়েছে যে, তিনটি স্থাপনার আশেপাশে বিকিরণের মাত্রা বৃদ্ধির কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি। তবে, এই তথ্যগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য স্বতন্ত্র তদন্তের দাবি উঠেছে।
অতিরিক্ত, সিনেটর জ্যাক রিড (রোড আইল্যান্ড) এই আক্রমণকে “একটি বড় ঝুঁকি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং ইরানের প্রতিশোধের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সিচুয়েশন রুমে ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ গ্রহণের ছবি প্রকাশিত হলেও, তাঁর গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের অনুপস্থিতি নজর কাড়েছে।
এরই মধ্যে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের নিজেদের জনগণ অর্থাৎ যুক্তরাষ্টরে লক্ষ লক্ষ জনগণ রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করেছে। বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদকারীরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে এবং “নো কিংস” নামক পোস্টার হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করছেন। এই আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণভাবে চলছে বলে জানা গেছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে সংঘর্ষের সম্ভাবনা রয়েছে।

পরমাণু বিজ্ঞানীদের বুলেটিন (২০২৩) এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, ইরান যদি অপরিবর্তিত থাকে, তবে তাদের কাছে কয়েক মাসের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে। এই তথ্যটি সামরিক উদ্বেগকে সমর্থন করে, তবে ট্রাম্পের দাবির জন্য প্রাথমিক প্রমাণের অভাব এটিকে সন্দেহজনক করে তুলেছে।
এর আগে, আল জাজিরার (২০ জুন ২০২৫) একটি রিপোর্টে ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, যা এই হঠাৎ আক্রমণের দাবির সঙ্গে সাংঘাতিক বিরোধ সৃষ্টি করে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন
যদি এই আক্রমণের দাবি সত্যি হয়, তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিবাদকে আরও তীব্র করতে পারে। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের JCPOA থেকে প্রত্যাহার এবং সর্বোচ্চ চাপের নীতি ইতোমধ্যে উভয় দেশের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইরানের প্রতিশোধী কার্যকলাপ বা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বৃদ্ধি এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।
বর্তমানে এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং মিডিয়া এই বিষয়ে আরও তথ্যের অপেক্ষায় রয়েছে। ঢাকা থেকে এই খবরের উন্নয়ন নজরদারি চলছে, এবং নতুন তথ্য পাওয়া মাত্র পাঠকদের জানানো হবে।
সূত্র: সামাজিক মাধ্যম পোস্ট, আল জাজিরা, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, আইএইএ, এবং উইকিপিডিয়া।
লেখক: Muslim Observer
Muslim Observer – মুসলিমের কথা বলে। ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন